২১ শে নভেম্বর ২০০৪ বর্তমান দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তার আগে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর অধীনে বিচারিক আদালত ও মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগে মামলা পরিচালনা/মনিটর করা, অনুসন্ধান/তদন্ত পর্যায়ে আইনী মতামত প্রদান করা সহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন পরিচালক (আইন)। ব্যুরোর কোন আলাদা প্রসিকিউশন ইউনিট ছিলোনা। সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত পাবলিক প্রসিকিউটর এবং অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটরগণ ব্যুরোর মামলা সমূহ পরিচালনা করতেন এবং তাদেরকে সহযোগিতা করত ব্যুরোর সহকারী পরিদর্শকগণ যারা মামলার সাক্ষী উপস্থাপন সহ মামলার আলামত ও কেস ডকেট (সিডি) সংরক্ষন করত। একইভাবে উচ্চ আদালতে (মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগে) মামলা সমূহ পরিচালনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং এবং এর্টনী জেনারেল অফিসের উপর নির্ভর করতে হতো। উচ্চ আদালতে ব্যুরোর মামলা সমূহ এর্টনী জেনারেল, অতিরিক্ত এর্টনী জেনারেল ও ডেপুটি এর্টনী জেনারেল দ্বারা পরিচালনা করা হত।
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ৩৩(১) ধারা অনুযায়ী কমিশন কর্তৃক তদন্তকৃত এবং স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলা সমূহ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রসিকিউটর এর সমন্বয়ে কমিশনের অধীন নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকবে। ৩৩(৩) ধারা মতে কমিশনের নিজস্ব প্রসিকিউটর নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কমিশন কর্তৃক অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত বা অনুমোদিত আইনজীবীগণ এই আইনের মামলা সমূহ পরিচালনা করবে। যেহেতু কমিশন কর্তৃক এখনও পর্যন্ত স্থায়ী প্রসিকিউটর নিয়োগ দান করা হয়নি তাই বর্তমানে বিচারিক আদালত এবং মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগে কমিশন কর্তৃক অস্থায়ী ভাবে নিয়োগকৃত বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর ও প্যানেল আইনজীবীগণ কমিশনের মামলা সমূহ পরিচালনা করেন। বিজ্ঞ আইনজীবীগণের নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে তাদের একাডেমিক রেকর্ড, আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিসের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, আন্তরিকতা এবং জ্ঞানের গভীরতা বিবেচনা করেই নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞ আইনজীবীদের মামলা পরিচালনার জন্য অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ দানের পরও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিষয়টি আমলে নেওয়া হয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে প্রয়োজনে তাদের নিয়োগ বাতিল ও করা হয়।
কমিশন বর্তমান অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী কমিশনের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন অনুবিভাগের প্রধান মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড প্রসিকিউশন) যার অধীনে ০২জন পরিচালক, ০৪জন উপরিচালক ও সহকারী পরিচালক সহ বেশ কিছু সংখ্যক অফিসার ও ষ্টাফ কর্মরত আছেন। যার মধ্যে মহাপরিচালকের দপ্তরে ০৪জন, পরিচালক (লিগ্যাল) এর অধীনে ০৮জন, পরিচালক (প্রসিকিউশন) এর অধীনে ০৭ জন, ২১ জন কোর্ট পরিদর্শক, ৪২জন সহকারী পরিদর্শক এবং ২১ জন কনষ্টবল আছে। বর্তমানে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগে মামলা পরিচালনার জন্য ৫৬ জন বিজ্ঞ প্যানেল আইনজীবী অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত আছেন যারা রীট, ফৌজদারী বিবিধ, ফৌজদারী আপীল এবং ফৌজদারী রিভিশন মামলা সমূহ পরিচালনা করে থাকেন। একইভাবে ঢাকাতে অবস্থিত ১৩টি স্পেশাল জজ জজ আদালতে ১৪জন বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া আছে। ঢাকার বাইরে ২২ টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অধীনে ৬৪টি জেলায় মামলার সংখ্যানুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদেরকে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপরিচালকগণ মনিটর করে থাকেন। ক্ষেত্র বিশেষে প্রধান কার্যালয় হতেও তাদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং করা হয়।
বিচারিক আদালত এবং মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলা পরিচালনার জন্য কমিশনের নির্দেশানুযায়ী আইনজীবী নিয়োগের কাজটি কমিশনের লিগ্যাল এন্ড প্রসিকিউশন অনুবিভাগ থেকে পরিচালনা করা হয়। বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর এবং প্যানেল আইনজীবীদের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তত্তাবধান এবং মনিটরিং কাজটিও সরাসরি এই অনুবিভাগ থেকে করা হয়ে থাকে। কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিলুপ্ত ব্যুরোর প্রচুর সংখ্যক অনিষ্পত্তিকৃত মামলা নিয়ে কাজ শুরু করে। সে ক্ষেত্রে পুরাতন এবং দীর্য় দিন ধরে চলমান মামলা সমূহ নিষ্পত্তি করা ছিলো কমিশনের অগ্রাধিকার যা এখও বলবৎ আছে। সীমিত লোকবল ও লজিষ্টিক সহায়তা সত্ত্বেও লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন অনুবিভাগ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বিচারিক আদালতে মামলা পরিচালনা
২০১৭ সালে মামলার সাজার হার বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৬৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শতভাগ মামলার সাজা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রসিকিউটিং এজেন্সি হিসেবে দুদক কাজ করে যাচ্চে। কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক আইন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিটি মামলায় সম্পৃক্ত আইনজীবিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ এবং ধার্য তারিখে আইনজীবি ও সাক্ষীদের উপস্থিত নিশ্চিত করে থাকেন। আইন অনুবিভাগের মাধ্যমে কমিশন প্রতিটি মামলা সমগুরুত্বের সাথে মনিটরিং করে থাকে। ২০১৭ সালে কমিশনের আইন অনুবিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ন কার্যক্রম নিম্নে উপস্থাপন করা হলো
২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বিশেষ জজ আদালতে ৩০৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যার মধ্যে ২৩৭টি (৭৯%) দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলা এবং বাকি ৭১টি (২১%) বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত মামলা। দুদকের দায়েরকৃত ২৩৭টি মামলা বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে। কমিশনের মামলা সাগার হার ৬৮% (প্রায়) এবং বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর মামলাগুলোতে সাজার হার ৩৯% (প্রায়)। নিম্নে ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য দুর্নীতির মামলার একটি পরিসংখ্যান প্রদান করা হয়েছে।
২০১৭ সনে বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য দুর্নীতির মামলার পরিসংখ্যান
বিবরণ |
দুদকের মামলা |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলা |
সর্বমোট |
বিচারাধীন মামলার সংখ্যা |
২৮০৩ |
৬০৯ |
৩৪১২ |
বিচার চলমান মামলার সংখ্যা |
২৪৪৬ |
৩৪৯ |
২৭৯৫ |
স্থগিত মামলার সংখ্যা |
৩৫৭ |
২৬০ |
৬১৭ |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
২৩৭ |
৭১ |
৩০৮ |
শাস্তি হওয়া মামলার সংখ্যা |
১৬১ |
২৮ |
১৮৯ |
খালাস পাওয়া মামলার সংখ্যা |
৭৬ |
৪৩ |
১১৯ |
২০১৭ সালে বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য দুর্নীতির মামলার চিত্র
২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মামলায় সাজার তুলনামূলক পরিসংখ্যান
বিবরণ |
দুদকের মামলায় সাজার হার |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলায় সাজার হার |
২০১৪ সাল |
৪৬% |
৩৩% |
২০১৫ সাল |
৩৭% |
২৫% |
২০১৬ সাল |
৫৪% |
৪৫% |
২০১৭ সাল |
৬৮% |
৩৯% |
২০১৭ সালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিশেষ আদালতসমূহ কর্তৃক দুর্নীতির মামলাগুলো নিষ্পত্তি ও শাস্তি পদানের পরিসংখ্যান
বিবরণ |
সংখ্যা |
|||
দুদকের মামলা |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলা |
সর্বমোট |
||
ঢাকা |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
১১৮ |
৩৪ |
১৫২ |
শাস্তিপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
৮৪ |
০৮ |
৯২ |
|
ঢাকার বাইরে |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
১১৯ |
৩৭ |
১৫৬ |
শাস্তিপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
৭৭ |
২০ |
৯৭ |
বিচার্য সম্পদ সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান
২০১৭ সনে বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য সম্পদ সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান
বিবরণ |
দুদকের মামলা |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলা |
সর্বমোট |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
৩১ |
০২ |
৩৩ |
শাস্তিপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
১৬ |
০১ |
১৭ |
খালাসপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
১৫ |
০১ |
১৬ |
বিচার্য মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান
২০১৭ সালে বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান
বিবরণ |
দুদকের মামলা |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলা |
সর্বমোট |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
০৮ |
- |
০৮ |
শাস্তিপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
০৮ |
- |
০৮ |
খালাসপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
- |
- |
- |
২০১৭ সালে বিশেষ জজ আদালতে বিচার্য ফাঁদ সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান
বিবরণ |
দুদকের মামলা |
বিলুপ্ত ব্যুরোর মামলা |
সর্বমোট |
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা |
১৪ |
- |
১৪ |
শাস্তিপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
০৫ |
- |
০৫ |
খালাসপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা |
০৯ |
- |
০৯ |
উচ্চতর আদালতে মামলা পরিচালনা
সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি/রিট/আপিল মামলার পরিসংখ্যান
২০১৭ |
২০১৭ সালে নিষ্পত্তি |
স্থগিতাদেশ পূর্বের জের |
২০১৭ সালে স্থগিতা-দেশ |
|
|||||
মামলার বিবরণ |
পূর্ববর্তী সময়ের জের |
২০১৭ সালে মামলা দায়ের |
মোট মামলার সংখ্যা |
মোট স্থগিতা-দেশ |
স্থগিতা-দেশ প্রত্যাহার |
স্থগিতাদেশ বিদ্যমান |
|||
রিট আবেদনের সংখ্যা |
৯২২ |
১০৬ |
১০২৮ |
১১৪ |
৩৮২ |
০ |
৩৮২ |
৪১ |
৩৪১ |
ফৌজদারি বিবিধ মামলার সংখ্যা |
১৩৬৬ |
১০২৩ |
২৩৮৯ |
৯২৬ |
৩৭১ |
০৬ |
৩৭৭ |
২০৬ |
১৭১ |
ফৌজদারি আপিল মামলার সংখ্যা |
৩৫৬ |
২০৯ |
৬৫৬ |
৬৬ |
১৪ |
০ |
১৪ |
৫ |
০৯ |
ফৌজদারি রিভিসন মামলার সংখ্যা |
২৭৯ |
১৬০ |
৪৩৯ |
১২০ |
৬৬ |
০ |
৬৬ |
১৬ |
৫০ |
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে ফৌজদারি আপিল/বিবিধ/রিভিসন/রিট হতে উদ্ভূত মামলার পরিসংখ্যান
|
২০১৭ |
২০১৭ সালে নিষ্পত্তি |
বর্ত-মানে পেন্ডিং |
স্থগিতা-দেশ পূর্বের জের |
২০১৭ সালে স্থগিতা-দেশ |
মোট স্থগিতা-দেশ |
স্থগিতা-দেশ প্রত্যা-হার |
স্থগিতা-দেশ বিদ্য-মান |
||
মামলার বিবরণ |
পূর্ববর্তী সময়ের জের |
২০১৭ সালে দাখিল-কৃত মামলার সংখ্যা |
মোট মামলার সংখ্যা |
|||||||
রিট পিটিশন |
৮৩ |
০ |
৮৩ |
১১ |
৭২ |
৫৬ |
০২ |
৫৮ |
১৫ |
৪৩ |
ক্রিমিনাল মিস কেস |
১০১ |
৯৪ |
১৯৫ |
৪৮ |
১৪৭ |
৪৫ |
০৫ |
৫০ |
২০ |
৩০ |
ক্রিমিনাল আপিল |
২৩ |
০৩ |
২৬ |
০৬ |
২০ |
৩১ |
০২ |
৩৩ |
১০ |
২৩ |
ক্রিমিনাল রিভিসন |
১৯ |
১৬ |
৩৫ |
১২ |
২৩ |
১৫ |
০ |
১৫ |
১২ |
০৩ |
গ্রেফতার
গ্রেফতারকৃত ব্যংক কর্মকর্তা, সরকারি কর্মকর্তা ও অন্যান্য পরিসংখ্যান
গ্রেফতারকৃতদের পেশা/পরিচিতি |
সংখ্যা |
ব্যাংক কর্মকর্তা/কর্মচারী |
২৫ |
সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী |
৮৪ |
জনপ্রতিনিধি |
১৩ |
নন-ব্যাংকিং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী |
১০ |
ব্যবসায়ী |
৫০ |
মোট |
১৮২ |
Email: dg.legal@acc.org.bd