Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আজ (২৫/০২/২০১৯) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশনের কৌশলপত্র -২০১৯ এর ওপর এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।


প্রকাশন তারিখ : 2019-02-25

 

আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে  কমিশনের কৌশলপত্র -২০১৯  এর ওপর এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই সমাজের বাইরের কোনো অংশ নয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি বিগত তিন বছরে সরকার  রাজনৈতিক দল কিংবা কথিত ক্ষমতাবানরা কেউ দুদককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি।  আমরা নিজেরা নিজেদের প্রভাবিত ভাবতে পারি , বাস্তবতা হচ্ছে কেউ আমাদেরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করারও সাহস পাননি। আমরা কেউ-ই ধোয়া তুলসির পাতা নই। তবে আমরা আমাদের ভুলটা স্বীকার করি, দুর্বলতা অস্বীকার করি না। 
তিনি বলেন অনেকেই বলেন মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যর্থতার জন্য দুদকের দিকে অঙ্গুলি তোলা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে  মানিলন্ডারিং মামলা পরিচালনার একক দায়িত্ব দুদকের হাতে না রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর),  পুলিশের সিআইডি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদক কেবল ঘুষ ও দুর্নীতিসম্পৃক্ত মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ তদন্তের ক্ষমতাপ্রাপ্ত। বাকি ২৬ টি সম্পৃক্ত অপরাধ সংশ্লিষ্ট মানিলন্ডারিংয়ের তদন্ত অন্যান্য সংস্থাসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। 


দেশের সিংহভাগ অর্থ পাচার হয়ে থাকে ্ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে। আমরা রাজস্ব বোর্ডের কাছে ্ওভার ইনভয়েসিংয়ের তালিক চেয়েছি। প্রয়োজনে তালিকা ধরে আইনি ব্যস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি একক সেক্টর  হিসেবে সর্বোচ্চ মামলা এবং গ্রেফতার হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। কমপক্ষে ১২০ জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি,  জিএমসহ উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার সরকারের  সচিব, যুগ্মসচিব, মহাপরচিালক পদমর্যাদার কমকর্তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা কৌশলগত কারণেই গ্রেফতার কম  করছি। 


তিনি বলেন বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে আরো মামলাও হতে পারে।  ব্যাংকার , ব্যবসায়ী যারা আসামি তারাও দ্রুত মামলার চার্জশিট চান। আমরা চেষ্টা করছি, তবে ব্যাংকের টাকাটা কিন্তু জনগণের। জনগণের টাকা ব্যাংকে ফিরে আসুক এটা কিন্ত জনগণ চায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন বেসিক ব্যাংকের প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকে  নগদ  জমা হয়েছে। কমিশনের মামলার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে চুরি হওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমরা অপরাধীদের  পিছনে নিরবচ্ছিন্নভাবে আইনি অভিযান অব্যাহত রাখবো। কাউকেই ছাড় দেব না।


তিনি বলেন কমিশন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী। কারণ  এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গীকার আমাদের কাছে এসেছে। দেশের সরকার প্রধান বলেছেন, দুর্নীতি সমস্য, এর লাগাম টেনে ধরতে হবে এবং একে দমন করতে হবে। আশা করি সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হবো।


মতবিনমিয় সভায় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোঃ জমির বলেন, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় দুদকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বচ্ছতা না থাকলে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। 
 শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুদকের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার পরিবশে সৃষ্টি করতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্র  এখন পয়সা উপার্জনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার মানের চরম অবনতি ঘটছে। যদি সক্ষম এবং দক্ষ শ্রমশক্তি না থাকে তাহলে এদেশে কাক্সিক্ষত মাত্রার বিনিয়ো আসবে না। বাংলাদেশকে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,  সরকারি স্কুল , কলেজে দুদকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।


তিনি আরও বলেন স্বাস্থ্য সেক্টরে প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কমিশনের অর্থ চিকিৎসকদের পকেটে যাচ্ছে।  এখানে স্যাডো এরিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দুদকের এদিকেও নজর দেওয়া উচিত।
তিনি দুদকের মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যাতে সবাই অনুধাবন করেন , কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড.মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, কমিশনের  মিশনে ‘‘দুর্নীতির গতি প্রকৃতি নির্ণয়’’  থাকা উচিত। কাজের মধ্যে স্বচ্ছতার দৃশ্যমান মানদ- থাকবে। স্বচ্ছতা আপেক্ষিক। তাই এর একটি মানদ- থাকা উচিত। কমিশনের প্রতি মানুষের ভয় ও শ্রদ্ধা থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ কিছুটা সহজ হবে। তিনি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে দুদকের দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চিকিৎসকদের প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট এবং ঔষধের স্যাম্পল মাইন বোমের মত্ োভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।


সিপিডির  নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুর্নীতি দমনকে আইনি প্রক্রয়ায় না দেখে, এটিকে উন্নয়নের প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি দমন করা না গেলে ২০৪১ সালের উন্নত দেশ বিনির্মাণ কঠিন হবে। 


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী কোচিং বাণিজ্য বন্ধে দুদকের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ,স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকিংখাতে দুদকের আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।


হাসিবুর রহমান বলেন বলেন দুদক, তথ্য কমিশন এবং সিএজির মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন।
মোঃ জাহাঙ্গীর বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মচারীদের বড় বড় দুর্নীতি বেড়িয়ে আসছে, এসব ক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সচিবদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই । নতুন তিনটি ব্যাংক অনুমোদেনের সমালোচনা করে তিনি এ বিষয়ে দুদকের তদন্তের আহ্বান জানান।


সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলমা মজুমদার বলেন, দুদকের উচিত মেগাখাতের দুর্নীতি দমনে অধিকতর মনোনিবেশ করার উচিত। তিনি দুদকের মতো সার্বিকভাবে সরকারে একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের সুপারিশ করেন।


বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ বলেন, দুদকের প্রতি মানুষের ক্ষোভ কিংবা হতাশা থাকতেই পারে। কারণ আমরা অতীতে রাষ্ট্রের মধ্যে ছিলাম  না। রাষ্ট্র কি জানতাম না, সিটি কি জানতাম না। সবই আমাদের কাছে নতুন । তাই রাতারাতি সবকিছু আশা করলে হতাশ হতেই হবে। তবে আশার কথা রাষ্ট্র ধীরে ধীরে দৃঢ় হচ্ছে। রাষ্ট্র আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সংহত হচ্ছে। 
তিনি  আরও বলেন দুদকের কাছে মানুষের আশা গগণচুম্বী। বাংলাদেশের প্রধান দুঃখ দুর্নীতি । তবে আনন্দের  সাথে বলতেই হয় দুদক জোড়ালোভাবে  চেষ্টা শুরু করেছে। বাংলাদেশ যেমন ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, দুদকও ঠিক তাই করবে। রাতারাতি এটা করা কঠিন। দুদক কয়েকটি দৃশ্যমান ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরো অন্তত এমন ২০টি ঘটনা ঘটালেই দুদকের প্রতি জনআস্থা  বৃদ্ধি পাবে।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচিত দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা মুক্ত থাকলে দুর্নীতি দমন হবে অবাস্তব চেষ্টা।


সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান শেলী বলেন রাজনৈতিক দুর্নীতি দমনে কমিশনকে আরো কাজ করতে হবে। ক্ষমতা এবং শক্তির উৎসেই আঘাত করতে হবে ।   


সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ  বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কিৃতিক আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে।


 সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বড় দুর্নীতি আগে ধরতে হবে।


মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশীদ বলেন দুর্নীতি একটি খারাপ সংস্কৃতি । শিক্ষা-স্বাস্থ্যে দুদক হস্তক্ষেপ করলে সমস্যা কোথায়  ।  রাজনৈতিক চিন্তা মাথায় না রেখে সমাজের কথা বিবেচনা করে কাজ করতে পারলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।


মতবিনিময় সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দীন আহমেদ,  সাবে রাষ্ট্র দূত হুমায়ুন কবির, কণ্ঠশিল্পী হায়দার হোসেন, প্রমুখ।