Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১৯ August ২০১৯

আজ (তারিখ: ১৫ আগস্ট, ২০১৯ খ্রি:) দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকাতে 'জাতীয় শোক দিবস’’ এর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।


প্রকাশন তারিখ : 2019-08-15

 

আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার প্রারম্ভেই দুদক চেয়ারম্যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিনি ১৫ আগস্ট যারা শহীদ হয়েছেন তাদের এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

আলোচনা সভায় তিনি বলেন, প্রতি বছরই জাতির পিতার মহাপ্রয়াণ দিবসে আমরা আলোচনা সভা করি, কবিতা আবৃতি হয়, তথ্য চিত্র দেখি, আমরা শপথ গ্রহণ করি এবং কেন যেন মনে হয় কেউ কেউ শপথ ভঙ্গও করি। শপথ যদি ভঙ্গ না হয়, তাহলে স্ব -স্ব দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করার কথা , আমাদের সকলের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়ার কথা, তাতো সেভাবে অনুধাবন করা যাচ্ছে হ না। মহান আল্লাহ-কে হাজির-নাজির রেখে আপনারা বলুন, আপনাদের দায়িত্ব কি সঠিকভাবে পালন করছেন? এ ব্যাপারে আমার বেশ সংশয় রয়েছে।

 

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিটি দপ্তর বা সংস্থার বিভাজিত কর্ম রয়েছে (Divisions of Labour) জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যদি স্ব-স্ব বিভাজিত কর্ম সুচারুভাবে পালন না করে-শুধু মিটিং-সিটিং নিয়ে নিজেদেরকে নিপতিত রাখি তা হলে এসব আনুষ্ঠানিকতা হবে অর্থহীন।

 

তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের কোন বিকল্প নেই। গত বছর যা করেছি এবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন । আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন রয়েছে। নিজেকে নিজেই আবিষ্কার করুন। নিজের মানসিকতা নিজেকেই পরিবর্তন করতে হয়। আইন করা হয় তা মান্য করার জন্য, এনফোর্সমেন্ট হয়তো তা মান্য করতে সাহায্য করে।

 

কমিশনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই আইন আপনার কতটুকু মান্য করেন। প্রতিটি অনুসন্ধান বা তদন্ত সকল প্রকার লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে মোহমুক্ত থেকে করেন কি-না? এর উত্তর আমি প্রত্যাশা করবো “হ্যাঁ”, তবে সমাজের অনেকেই উত্তর দিবেন “না”। এটা করার জন্য আমাদেরকে সকল প্রকার চাপ তা রাজনৈতিক হতে পারে, সামাজিক হতে পারে, পেশাগত হতে পারে। এসবের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। এমনকি ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানের সকল প্রকার লোভ-লালসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ নির্মোহ দায়িত্ব্ পালনে আমাদের কোনো ভাই-বন্ধু বা স্বজন নেই, আমরা কাউকেই চিনি না। আর এমনটি হলেই জাতির পিতার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। তার আদর্শকে লালন করা হবে। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, অর্থ-বিত্ত বৈভব জীবনে শান্তি বা স্বস্তি দেয় না, বরং বিশ্বাস অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করা গেলে জীবনে শান্তি ও স্বস্তি দুটোই পাওয়া যায়।

 

আজ নিদারুণ এই শোকে আমাদের শপথ হওয়া উচিত , দর্নীতিবাজদের ন্যূনতম প্রশ্রয় না দিই, সুচারুরূপে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করি। দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে রক্ষা করি। আগামী প্রজন্মের জন্য দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি। আমরা যদি দুর্নীতিমুক্ত বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা না রাখি, তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না । এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে।


তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেই বলেছিলাম- প্রতিটি অভিযোগ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্য থেকেই নিষ্পত্তি করতে হবে। তারপর অনেকেই সময়ের স্বল্পতার কথা বললেন। আমরা বিধি পরিবর্তন করে সময় বাড়িয়ে দিয়েছি। তারপরও নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান বা তদন্ত শেষ করা যাচ্ছে না কেন ? এই টাইম-লাইন না মানার কারণেই তদবিরবাজি হয়, ঘুষখোররা ঘুষ খাওয়ার সাহস পায় এবং সর্বোপরি কমিশনের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।


তিনি বলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্রষ্টা, মহান স্থপিত এবং মানসিকতার পরিবর্তনের মহান দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন দরকার। যাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ , যাদের হয়নি তাদের প্রতি অনুরোধ নিজেকে পরিবর্তন করুন। পরিবর্তন ব্যক্তি থেকে শুরু হয়ে গোষ্ঠী হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন ঘটায়। পিছনের দিকে না তাকিয়ে, আসুন সামনের দিকে আগাই। সততা ও স্বচ্ছতার সাথে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করি। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনই পারে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। মানুষ এটা বিশ্বাসও করে। তা না হলে কশিনের অভিযোগকেন্দ্রর হটলাইন-১০৬-এ বিগত দুই বছরে কেন ৩১ লক্ষ মানুষ ফোন কল করেছেন ? কিছুটা হলেও তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হয়েছে কমিশন। আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে তাদের আশা-ভরসার বিমূর্ত প্রতীক হতে পারে কমিশন। তাই আসুন, আমরা সবাই সঠিকভাবে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে আত্মনিয়োগ করি।

 

দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্রষ্টার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি, যিনি মাত্র ৫৫ বছর জীবনে কোটি কোটি মানব হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, নবাব সিরাজ-উ-দৌলার খুনিরা যেভাবে অপঘাতে ঘৃণিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তেমনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরও একই পরিণতি হয়েছে। আজও যারা এখনও বেঁচে আছে তারা দুর্বিষহ জীবন-যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছে।

 

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, মোঃ আক্তার হোসেন, উপপরিচালক সেলিনা আক্তার, সহকারী পরিচালক শেখ গোলাম মওলা প্রমুখ।

 

আলোচনা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ই আগস্টে নিহত শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন দদুকের উপপরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম।