Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st মার্চ ২০১৯

সরকারি সম্পত্তি যে বা যারা গ্রাস করেছেন, সরকারকে ফিরিয়ে দিন, নইলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে --দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ


প্রকাশন তারিখ : 2019-03-31


আজ (৩১ মার্চ, ২০১৯) বাংলাদেশ  শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী, দুদক মিডিয়া আ্যওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ও সততা সংঘের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণ সাক্ষরতা অভিযানের  নির্বাহী পরিচালক রাশেদা  কে চৌধুরী বলেন,  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও কলহমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ। তিনি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, নতুন প্রজন্মের  প্রতিনিধি সিলেটের একজন মেয়ে শিক্ষার্থী জানায় তার বাবা তাকে ঈদ উপলক্ষে  ১৫ হাজার টাকার লেহেঙ্গা তাকে উপহার দিয়েছিল। সে তার বাবার বেতনাদি সম্পর্কেও জানতো। সেই মেয়েই প্রকাশ্যে তার বাবাকে বলেছিল এটা কি দুর্নীতি না ? পরবর্তীতে কোরবানির ঈদে ঐ মেয়েটি তার বাবার দামি উপহার গ্রহণ করেনি। সেই তবে বাবাকে দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি দুদকের প্রশংসা করে বলেন, দুদক নতুন প্রজন্মকে নিয়ে  কাজ শুরু করেছে। অনেকেই বলেন ব্যাংক লুটপাট নিয়ে দুদক কাজ করুক। আমি বলবো এ কাজ দুদক করবে। আগামী দিনে যারা ব্যাংক চালাবে তাদের নিয়ে যে কাজ করছে এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন নৈতিকতা, মূল্যবোধ জিপিএ-৫ এর মাধ্যমে অর্জন করা যাবে না। দুদক শ্রেণি কক্ষের ভিতরের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। সেই জন্য শিক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে দুদককে ধন্যবাদ জানাই। একথা ¯ী^কার করতেই হবে দুদক যদি কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন না করতো,  তাহলে হয়তো কোচিং বিরোধী নীতিমালা আইনি বৈধতা পেতনা।


তিনি বলেন সততা সংঘ ও সততা স্টোর পরিচালনা দুদকের একার কাজ না। এটা আমাদের সকলের কাজ। এক্ষেত্রে মিডিয়া, সুশীল সমাজসহ  সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সমনি¦তভাবেই দুর্নীতিবিরোধী চেতনার বিকাশ সাধন করতে হবে।


অনুষ্ঠানের সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বক্তব্যের শুরতেই মহান মুক্তিযুদ্দের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ত্রিশ লক্ষ বীর শহীদ এবং ২ লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।


তিনি বলেন,  আজকে কেন যেন মনে হয় অনিয়মকে সবাই নিয়মে পরিণত করছে। এই নিগড়ে আমরা সবাই  বাঁধা পড়েছি। বনানীর এই বিয়োগাত্মক ঘটনা এই সব অনিয়মের পরিণতি।  এ জাতীয় অনিয়মকে দুর্নীতি অবহিত করে দুদক চেয়ারেম্যান বলেন, সময় মতো কাজ করবেন না এটাও দুর্নীতি । ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আগেই কাজ শুরু হয়েছে, এবার এসব অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ শুরু হবে।  ১৮ তলা ভবনের  অনুমোদন পেলো,  বানালেন ২২ তলা। এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত , তাদের ক্ষমা হবে না। এভাবে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর সহ্য করা ঠিক হবে না। এদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।


তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক কাজ করছে, তবে এ কথাও ঠিক কমিশনের একার পক্ষে কাক্সিক্ষত মাত্রায় ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় প্রশ্ন করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সমাজের সকল স্তরে মূল্যবোধ বিকশিত করার জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হব্ ে। তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কমিশনের ত্রুটি –বিচ্যূতি নিয়ে লিখবেন, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই।


তিনি বলেন  আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা সততা সংঘ এবং সততা স্টোর নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সীমিত অর্থ দিয়ে প্রতিটি সততা সংঘের সদস্যরা যাতে সাংবাৎসরিক ভিত্তিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সমাজ শক্তির অংশগ্রহণ ছাড়া এ জাতীয় কার্যক্রম বিকশিত হয় না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আসুন সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশের সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি।


তিনি বলেন, আমরা অনেক কাজই করতে পারি না। কেন পারি না ? এর উত্তর দেওয়া কঠিন কারণ আমরা একটি গ-ির মধ্যে কাজ করি।  কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইন-১০৬ এ লক্ষ লক্ষ ফোন কল এসেছে। এর সামান্য সংখ্যক অভিযোগই আমলে নেওয়া হয়েছে। আর যেসব অভিযোগ কমিশন আইনের আওতায় নেই , সে বিষয়েও আমরা সঠিক পরামর্শ প্রদান করছ্।ি আর যাই হোক হটলাইন-১০৬ এখন জনগণের অভিযোগ জানানোর এক বিশ^স্ত প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই কমিশনের ইনফোর্সমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে দেশব্যাপী তাৎক্ষণিক দুর্নীতি প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অধিকাংশ অভিযানই সফল হচ্ছে এবং দুর্নীতি ঘটার আগেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। মূলত  ১০৬ হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধের অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করা হচ্ছে।


তিনি বলেন যে সকল দুর্নীতিবাজ  সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে দখল করে ভোগদখল করছেন, নদী দখল করেছেন, লুটপাট করে সম্পত্তি গ্রাস করেছেন,  এইসব জনগণের সম্পত্তি  ত্যাগ করুন নইলে আপনাদের  জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করছে।


দুদক চেয়ারম্যান বলেন,  গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ ,বাংলাদেশ রেলওয়ে  কিংবা বনবিভাগের সম্পত্তি দখল করে রেস্ট হাউজ বানিয়েছেন । নিয়ম অনুযায়ী সরকারের সম্পত্তি সরকারের নিকট সমর্পণ করুন । নইলে  কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। যার অনিয়মের মাধ্যমে জনগণের অর্থ নিয়েছেন অথবা যারা অর্থ দিয়েছেন এইসব অর্থ লোপাটকারীরাও আইনের আওতায় আসবে। তাই যারা অবৈধভাবে অর্থ নিয়েছেন অথবা অর্থ দিয়েছেন দয়া করে জনগণের অর্থ বিধিমত জনপ্রতিষ্ঠানের জনগণের কাছে জমা দিন , নইলে পরিণতি সুখকর  হবে না।


তিনি শ্রেনিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে  সম্মানিত শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিম্মাদার , আপনারা আমাদের জিম্মি করবেন না।  কোচিং বাণিজ্য ও নোট বাণিজ্য থেকে আমাদের শিক্ষাকে মুক্ত করুন।  আমাদের নৈতিকমূল্যবোধ  সম্পন্ন জাতি গঠনে আপনারা কার্যকর ভূমিকা রাখুন।


তিনি বলেন, মূল্যবোধহীন উন্নয়ন কখনই টেসকসই উন্নয়ন হয় না।  সরকারের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন,  প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ফাঁক-ফোঁকড় যাতে না থাকে অর্থাৎ  জরহম ঋবহপরহম এর ব্যবস্থা যাতে থাকে তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। প্রকল্প বা জন-কর্মসূচিতে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন সহযোগিতা করতে প্রস্তত। দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই মিলে জাতির পিতার স্বপ্নের বৈষম্যহীন , শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত  বাংলাদেশ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করি।


অনুষ্ঠানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, দুদক মিডিয়া জুড়ি বোর্ডের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিতার্কিক আলিফ আল জামাল , সততা সংঘের সদস্য সঞ্চিতা রহমান মিম, নেত্রকোনা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ খান, সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সালাউদ্দীন নাঈম, প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দুদক মিডিয়া আ্যওয়ার্ড বিজয়ী ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার  মোঃ ফখরুল ইসলাম হারুণ, ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে বিজয়ী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু প্রমুখ।


এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান ও এএফএম আমিনুল ইসলাম।


এখানে উল্লেকখ্য যে, এবারের দুদক মিডিয়া আ্যওয়ার্ড বিজয়ী সাংবাদিকগণ হচ্ছেন যথাক্রমে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকারী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু, ২য় স্থান অধিকারী ৭১ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার পারভেজ নাদির রেজা এবং প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ফখরুল ইসলাম হারুণ এবং ২য় স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হকিকত জাহান হকি। প্রথম পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও  সার্টিফিকেট এবং ২য় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৪০ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।